আল্লাহর প্রশংসা-all praise is due to Allah

আল্লাহর প্রশংসা


আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের মাহাত্ম্য, মহত্ব, গুণ, ক্ষমতা ও কুদরতের বর্ণনা করা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। কেননা তা যেকোন লোকের শক্তি, সাধ্য ও জ্ঞানের বাইরে। কিন্তু তাঁর সম্পর্কে দুই একটি কথা যা বর্ণনা করছি তা তাঁর অসীম ও অফুরন্ত গুণ ও ক্ষমতার লক্ষ কোটি ভাগের এক ভাগও নয়। তিনি লা-শরীক আল্লাহ তাঁর সমকক্ষ আর কেউ নয়। তিনি নিরাকার- কেউই তাকে দেখতে পায় না। তিনি ধারণা ও কল্পনার বাইরে। তার রূপ ও গুণের কথা ভেবে কূল পাওয়া যায় না। তিনি সবার চোখের আড়ালে থেকে নিজের কুদরতী কারিগরী চালিয়ে যাচ্ছেন। আর তাঁরই মাধ্যমে সঠিকভাবে সমস্ত পৃথিবীর সব কিছু পরিচালিত হচ্ছে। এই পৃথিবীর আকাশ-বাতাস, চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র, পাহাড়-পর্বত, সাগর-মহাসাগর তারই সৃষ্টি। জ্বিন, মানব, ফেরেশতা, পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গ প্রভৃতি তিনিই সৃষ্টি করেছেন। সপ্তস্তর আকাশ তিনি কিভাবে সৃষ্টি করে শূন্যে লটকিয়ে রেখেছেন, এর একটি আরেকটির সংঙ্গে সংবদ্ধ বা সম্পৃক্ত নয় অথচ যে যার জায়গায় সম্পূর্ণরূপে সুদৃঢ় অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে । সপ্ততল ভূতলেরও একই রকমের অবস্থা। তা খুবই বিস্ময়কর ও একান্ত অভাবনীয় ঘটনা ব্যতীত আর কি? তাঁর সীমাহীন কুদরতের লীলা সমস্ত পৃথিবী জুড়ে চোখের সামনে ভাসে এবং অন্তরে অনুভব করা যায়। মাটিতে একটি ক্ষুদ্র বীজ পতিত হয়ে তাতে অঙ্কুর গজিয়ে আস্তে আস্তে তা বিরাট মহিরূহে পরিণত হয়। একমুষ্টি মাটি হতে আদম (আঃ)-এর মূর্তি বানিয়ে তাতে কি এক আজব রূহ ফুঁকে দেবার ফলে সেই মূর্তি জীবন্ত হয়ে যায় । তা নড়াচড়া করে, কথা বলে, কথা শুনে, হাসে-কাঁদে, সুখ-দুঃখ অনুভব করে, ভাল-মন্দ বুঝে । মহান সৃষ্টিকর্তার কুদরত ব্যতীত কার এমন ক্ষমতা যে এই ধরনের করতে পারে। তাঁর একদিকে যেমন কুদরতের পারাপার নেই, অন্যদিকে অভিরুচি ও ইচ্ছারও অন্ত নেই।

এই পৃথিবীতে মানুষকে সকলের শ্রেষ্ঠ সম্মানিত হিসেবে বানায়ে, তাদেরকে জ্ঞান-বুদ্ধি প্রদান করতঃ কে তাদের মাঝে তাঁর অনুগত ও কে  অবাধ্যগত তা যাচাই করে দেখার জন্য ভাল-মন্দ দুটি পথ তাদের সামনে রেখে দিয়েছেন। যে এ ধরনের পথের অনুসরণ করে, সে  তদ্রপ তার ফল লাভ নিবে। ভাল পথ চিনিবার জন্য তিনি একদিকে যেমন অসংখ্য নবী-রসূল প্রেরণ করেছেন, তেমনি অন্যদিকে খারাপ রাস্তায় টেনে নেবার জন্য ঠিক তেমনি আবার শয়তান ইবলীস ও রয়েছে। এ অবস্থার উপর ভিত্তি করেই পৃথিবীতে ভাল-মন্দ, পাপ-পুণ্য, সৎ-অসতের খেলা চলছে। অবশ্য এর ও পরিণতি আছে। অনন্তকাল তা স্থায়ী থাকবে না। একদিন না একদিন এই খেলা শেষ হয়ে যাবে, সেদিন ভাল-মন্দের বিচার হবে। বিচারে যারা ভাল করেছে তাদের জন্য ভাল ফল এবং যারা খারাপ করেছে তাদের জন্য খারাপ ফল হবে।

পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলা পবিত্র আল-কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে নিজের পরিচয়ের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। নিচে কয়েকটি আয়াতে তা বর্ণনা করা হলঃ


اللّهُ لاَ إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ


উচ্চারণ:“আল্লাহু লা-ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাইয়ুম”। 

অর্থঃ “তিনিই আল্লাহ এবং তিনি ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নেই।" তিনি চিরস্থায়ী এবং চিরঞ্জীব। আদিকাল থেকেই তাঁর  অস্তিত্ব বিরাজ করছে এবং অনন্তকাল পর্যন্ত বিরাজ করবে। জন্ম-মৃত্যু, ধ্বংস-বিলুপ্তি এ সকল থেকে তিনি পবিত্র।



لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلاَ نَوْمٌ


উচ্চারণ:“লা তা’খুযুহু সিনাতুও ওয়ালা নাউম"।

 অর্থ: তাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করতে পারে না।”

এই পৃথিবীর প্রতিপালন করতে তিনি শ্রান্ত-ক্লান্ত হন না। বিশ্রাম করা, নিদ্রা যাওয়া তাঁর দরকার হয় না ।