নূরে মুহাম্মদী (সাঃ)-এর সৃষ্টি রহস্য-Mystery of the creation of Noor Muhammadi (SAW)

নূরে মুহাম্মদী (সাঃ)-এর সৃষ্টি রহস্য


হযরত আদম (আ.)-কে নূরে মুহাম্মদী অবলোকন


পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলা হযরত আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করে সর্বজ্ঞান শিক্ষা দান করলেন । জ্ঞান লাভ করার পর তিনি আল্লাহ তাআলার কাছে আরজ করলেন, হে দয়াময়! আপনি আমার কুনিয়াত আবু মুহাম্মদ অর্থাৎ মুহাম্মদের পিতা রাখলেন কেন? এর অর্থ তো কিছুই বুঝলাম না। 

আল্লাহ রাব্বল আলামীন বললেনঃ হে আদম! উপরের দিকে তাকায়ে দেখ। 

হযরত আদম (আঃ) তখন মাথা তুলে আরশে মুআল্লার দিকে তাকায়ে তার পর্দায় প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নূর দর্শন করলেন।

এই নূর দেখে হযরত আদম (আঃ) প্রশ্ন করলেন, হে দয়াময়! এটা কার নুর আমি দেখছি?

আল্লাহপাক উত্তরে বললেন, হে আদম! এটা তোমার সন্তানদের মাঝে জনৈক নবীর নূর । আসমানে সে আহমদ নামে পরিচিত এবং পৃথিবীতে তার নাম হবে মুহাম্মদ (সাঃ)। যদি তাকে আমি সৃষ্টি না করতাম তা হলে আমি তোমাকে ও আসমান-যমিনকে সৃষ্টি করতাম না।


নূরে মুহাম্মদী (সাঃ)-এর সৃষ্টি রহস্য

আল্লাহ তাআলা অনাদি ও অনন্ত । কখন হতে তিনি আছেন, কবে পর্যন্ত তিনি থাকবেন তা যে কোন সৃষ্টির জ্ঞানের বাইরে। কখন হতে তিনি আছেন এ ধরনের প্রশ্নও ঠিক নহে, কবে পর্যন্ত তিনি থাকবেন, এ ধরনের প্রশ্ন ও সঠিক নয়। যেহেতু তিনি সব সময়ই ছিলেন এবং সব সময়ই থাকবেন। তিনি ভূত-ভবিষ্যৎ-বর্তমান সব সময়ই বিদ্যমান। তবে তিনি একাই ছিলেন ।


এমন এক সময় ছিল যখন তিনি ব্যতীত আর কিছুরই অস্তিত্ব ছিল না। হঠাৎ তিনি নিজের খেয়ালে মাখলুক সৃষ্টির ইচ্ছা করলেন। আর এই ইচ্ছানুসারে  তিনি সর্বপ্রথম তার পরম প্রিয় বন্ধুর নুর সৃষ্টি করলেন।

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর এক হাদীসের দ্বারা এই নূরের পয়দায়েশ তাঁর পরিচয়ের বিবরণ জানা যায় । হযরত আলী (রাঃ) হতে এই হাদীসটি বর্ণনা হয়েছে। তিনি বলেন, একদিন আমি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম, এমন সময় সাহাবী জাবের বিন আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সামনে উপস্থিত হয়ে আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাঃ) ! আমার পিতা ও মাতা আপনার কদমে কোরবান হউক। আপনার নিকট একটি বিষয় জানতে আরজ রাখি, অনুগ্রহপূর্বক জানায়ে বাধিত করুন- আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি জগতের কোন বস্তুটি সর্বপ্রথম সষ্টি করেছেন?

উত্তরে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বললেন, হে জাবের! আল্লাহ তাআলা সব কিছু সৃষ্টির আগে তাঁর কুদরতী অপূর্ব নূর হতে তোমার নবীর নূরকে সৃষ্টি করেছেন।

এরপর সেই নূরকে আল্লাহ পাকের নিকটবর্তী কোন এক খাস জায়গায় সযত্নে রেখে দেয়া হল । সে স্থানে বসে সে আল্লাহ পাকের ইবাদাত-বন্দেগী, মোরাকাবা-মোশাহাদা এবং সিজদাহ প্রভৃতি করে দিন কাটাতে লাগলেন। এভাৰে বার হাজার বৎসর অতিবাহিত হল । বর্ণিত রয়েছে যে, সে সময়কার একটি দিন ছিল পৃথিবীর ১০০০ হাজার বছরের সমান।


হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নূর থেকে সমস্ত কিছুর সৃষ্টি 

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ পাক সেই নিজ কর্তৃক সৃষ্ট নূর দ্বারা ঐভাবে সুদীর্ঘকাল ইবাদাত-বন্দেগী করায়ে তাকে চারটি ভাগে বিভক্ত করলেন। এর এক ভাগের মাধ্যমে আরশে আজীম, দ্বিতীয় ভাগ দিয়ে কলম এবং তৃতীয় ভাগ দিয়ে লাওহে মাহফুজ সৃষ্টি করলেন। এরপর চতুর্থ অংশটিকে আবার চার ভাগে ভাগ করলেন। প্রথম ভাগ দিয়ে আরশ বহনকারী ফেরেশতা, দ্বিতীয় ভাগ দিয়ে আল্লাহর নিজস্ব আসন কুরসী অর্থাৎ সিংহাসন এবং তৃতীয় ভাগ দিয়ে ফেরেশতাকুল সৃষ্টি করলেন। এরপর চতুর্থ ভাগকে আবার চার ভাগে বিভক্ত করে এর প্রথম ভাগ দিয়ে আসমান, দ্বিতীয় ভাগ দিয়ে যমিন এবং তৃতীয় ভাগ দিয়ে বেহেশত ও দোযখ সৃষ্টি করলেন। আর চতুর্থ অংশকে পুনরায় চার ভাগে বিভক্ত করে প্রথম ভাগ দিয়ে মোমীনদের চোখের জ্যোতি, দ্বিতীয় ভাগ দিয়ে কলবের জ্যোতি, তৃতীয় ভাগ দিয়ে তাওহীদের নূর তথা- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর পবিত্র নূর সৃষ্টি করলেন । আর চতুর্থ ভাগ দিয়ে অন্যান্য বস্তুসমূহ সৃষ্টি করা হল ।

অন্য এক বর্ণনায় আছে, নূরের প্রথম ভাগ দিয়ে জ্ঞান, দ্বিতীয় ভাগ দিয়ে লজ্জা এবং তৃতীয় ভাগ দিয়ে মহব্বত সৃষ্টি করা হল। তবে সে যাই হউক না কেন, সর্বপ্রথম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নূর এবং তার পরে সেই নূরের বিভিন্ন ভাগ হতে অন্যান্য মাখলুক সৃষ্টি করার পর আল্লাহ রাব্বুল আলামীম কলমকে আদেশ করলেন, হে কলম! তুমি আরশে মুআল্লায় কালেমায় তাইয়্যেবা- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ লেখ।

কলম আল্লাহ তাআলার আদেশ পেয়ে একাধারে ৪০০ শত বছর পর্যন্ত লেখতে থাকেন-“লা ইলাহা ইলালাহু  কিন্তু কালেমার শেষাংশ ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সে লেখল না। কোন কোন রেওয়াতে উল্লেখ আছে যে, একাধারে ৪০০০ হাজার বৎসর ধরে কলম কেবল “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুর মাহাত্ম্যই লিপিবদ্ধ করল । এরপর আল্লাহ তাআলা কলমকে প্রশ্ন করলেন, কলম তুমি কি লিখেছ বল।


কলম যা লিখেছে তা প্রকাশ করল । তখন আল্লাহ তাআলা কলমকে প্রশ করলেন-তুমি কালেমার শেষাংশ লিখনাই কেন?

কলম ভয়ে ভয়ে উত্তর দিল, হে প্রভু! আমি জানি, আপনার পবিত্র নাম একক ও অদ্বিতীয়। তা ব্যতীত অন্য কিছুই তো আমার জানা নেই। তাই আপনার মহান নামের সঙ্গে অন্য কারও নাম আমার মাধ্যমে লেখা সম্ভব হয়নি। আপনি বলুন, আপনার নামের সঙ্গে অন্য যে নামটি লিখতে আদেশ করেছেন সেই নামটি কার?

কলমের উত্তরে আল্লাহ পাক নাখোশ হয়ে বললেন, কলম! তুমি আমার নামের সঙ্গে ঐ নাম না লেখ বড়ই ভুল করেছ। ঐ নামটি যার সে আমার একান্তই প্রিয়জন, অন্তরঙ্গ বন্ধু । অতএব, আমার নামের সাথে তার নামটিও লিপিবদ্ধ কর । কলমের প্রতি আলাহ পাক এভাবে নাখোশ হওয়ায় ও তাকে  হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নাম লিখতে বলায় কলম ভয়ে কেঁপে উঠল এবং তাতে সে দুভাগ হয়ে গেল । কলমের নিবের মধ্যখানে যে চির হয়ে থাকে তা সেই প্রসিদ্ধ ঘটনাটিরই নিদর্শন ব্যতীত আর কিছু নয়। সে যাহা হউক আল্লাহ পাকের নির্দেশ অনুসারে কলম এরপর অল্লাহর রাসূল হযরত মুহমদ (সাঃ)-এর নামের গোপন রহস্যাবলী ও ৪০০০ হাজার বছর পর্যন্ত লিপিবদ্ধ করল।