Jikirer Fozilot Bangla-আল্লাহর যিকিরের ফযিলত
এই বিশ্বের বুকে মানুষ নানা অবস্থা ও নানা পরিবেশের ভিতর দিয়ে কাল যাপন করে থাকে। এই নশ্বর জীবনে মানুষের একমাত্র মূলধন হচ্ছে আল্লাহর জিকির বা স্মরণ । নফল ইবাদতের দ্বারা আল্লাহ পাকের যে জিকির সম্পাদিত হয়, তাই হচ্ছে উত্তম পন্থা ও সর্বশ্রেষ্ঠ পথ। কিন্তু যারা আল্লাহর স্মরণ হতে গাফেল থাকে তাদের মর্মন্তুদ পরিণাম সম্পর্কে পরম কৌশলী আল্লাহ পাক ঘোষনা করেছেন -
অর্থাৎ- যারা আমার স্মরণ হতে পৃষ্ঠ-প্রদর্শন করে তাদের দুনিয়ার জীবন হবে দুর্যোগপূর্ণ এবং হাশরে তাকে আমি অন্ধ করে তুলব।
এই আয়াতে আল্লাহ পাক দুটো বিষয় সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন।
প্রথমতঃ দনিয়ার জীবনে অভাব-অনটন, চিন্তা-ভাবনা, দুর্যোগ ও অসুবিধা লেগেই থাকবে। কোন কিছুর দ্বারাই উহা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে না। বর্তমান বিশ্বের এই সংঘাতপূর্ণ মুহূর্তে ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবনে যে দুর্যোগের ঘনঘটা অহরহ পরিদৃষ্ট হচ্ছে তা কেবল আল্লাহর স্মরণ হতে গাফেলা থাকার পরিণাম ফল।
দ্বিতীয়তঃ রোজ হাশরে অন্ধ হয়ে উঠা। অন্ধ ব্যক্তির সামনে এই পৃথিবীর রূপ-রস, গন্ধ-স্পর্শ, সুন্দর-অসুন্দর, উত্তম-অধমের কোন তারতম্য নেই। সব কিছুই তার নিকট অন্ধকার, মূল্যহীন। তেমনি রোজ হাশরে যে অন্ধ হয়ে উঠবে, সে সহীহ-সালামতে কিছুতেই হিসাব নিকাশ দিতে পারবে না এবং তার পরিত্রাণ লাভ করা সুদূর পরাহত।
মোটকথা দুনিয়ার জীবনে যে যেমন অশান্তির ভিতর দিয়ে অতিবাহিত করবে, তেমনি আখেরাতের জীবনেও সে অকৃতকার্য ও অভিশপ্ত বলে পরিগণিত হবে।
শুধু তাই নয়, দয়াময় আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেছেন---
অর্থাৎ—তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করবো এবং আমার শোকরগোজারী কর, কিন্তু আমার কুফরী করো না।
এই আয়াতে আল্লাহ পাক দুটো বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করেছেন। প্রথমত, যারা আল্লাহকে স্মরণ করে, আল্লাহ পাক তাদেরকে রহমতের সাথে স্মরণ করেন। আল্লাহর স্মরণ করা অর্থ হচ্ছে, বান্দার প্রতি আল্লাহর রহমত ও করুণা বর্ষিত হওয়া এবং আল্লাহর রেজামন্দির ভিতর দিয়ে বান্দার চলার পথ অতিবাহিত হওয়া। সুতরাং বান্দার ইবাদতের দ্বারাই আল্লাহর রেজামন্দি ও খোশনুদীর পথ সুপ্রশস্ত হয়ে থাকে। দ্বিতীয়তঃ আল্লাহর নাফরমানী ও কুফরী থেকে সর্বোতভাবে বিরত থাকা এবং আল্লাহর শোকরগুজারীর পথ অবলম্বন করা। এই ক্ষেত্রে শোকরগুজারীর অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর নেয়ামতরাজির কৃতজ্ঞতা মনে, মুখে ও আমলের দ্বারা প্রকাশ করা। এজন্য আল্লাহর নেয়ামতে শোকগুজারীর পথ অবলম্বন করা এ হচ্ছে বান্দার প্রকৃত জীবনের মূল উদ্দেশ্য । আর এই কারণেই আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন-
আমি মানুষ এবং জ্বিন সম্প্রদায়কে কেবলমাত্র আমার ইবাদত-বন্দেগীর জন্যই পয়দা করেছি।
সুতরাং আমরা কায়মনে এই প্রার্থনা করছি, হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে তোমার মকবুল বান্দাদের মধ্যে পরিগণিত কর, তোমার দুয়ার হতে আমাদেরকে দূরে সরিয়ে দিয়ো না।
হে আল্লাহ পাক! আমাদের সকলকে বর্ণিত নফল ইবাদতগুলো পালন করার তৌফিক দান কর এবং দুনিয়ার জীবনে যখনই সুযোগ পাওয়া যাবে তখনই আল্লাহ আয়ালার জিকির করার চেষ্টা করতে হবে। জিকির হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের অন্যতম পন্থা।
আল্লাহ পাকের যিকির বান্দার জন্য অপরিহার্য । আল্লাহর যিকিরের মাধ্যমেই বান্দাহ পবিত্র হতে পারে এবং আল্লাহর কুদরত ও নৈকট্য লাভে সক্ষম হতে পারে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেছেন-
অর্থঃ তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব এবং তোমরা আমার শোকরগুজারী কর, আমার নাফরমানী করো না।
আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন-
অর্থঃ তিনি (আল্লাহ) যিনি তোমাদের উপর রহমত বর্ষণ করেন এবং তাঁর ফেরেশতামণ্ডলী তোমাদের জন্য দোয়া করেন, যাতে করে তোমাদের অন্ধকার হতে আলোর দিকে নিয়ে যেতে পারেন।
অপর এক আয়াতে আল্লাহ পাক আরো ঘোষণা করেছেন-
অর্থঃ তোমরা ঐ ব্যক্তির অনুসরণ করো না, যে স্বীয় অন্তরকে আমার যিকির হতে গাফেল রেখেছে এবং খাহেশাতে নফসানীর পায়রবী করেছে।
মহান আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন-
অর্থঃ যে ব্যক্তি আমার যিকির হতে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে, তবে তার পার্থিব জীবন হবে দুঃখপূর্ণ এবং রোজ কিয়ামতে সে অন্ধ অবস্থায় উথিত হবে ।
হাদীসে কুদসীতে আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন—
অর্থঃ আমি আমার বান্দাহর সাথেই থাকি যতক্ষণ সে আমার যিকির করে ও তার ওষ্ঠদ্বয় প্রকম্পিত থাকে।
অপর এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন—
অর্থঃ আমি আমার বান্দার ধারণার সাথেই অবস্থান করছি এবং আমি তার সাথেই থাকি যখন সে আমায় স্মরণ করে। যদি সে আমাকে মনে মনে স্মরণ করে, আমিও তাকে মনে মনে স্মরণ করি। আর যদি সে আমাকে কোন জমাতের সাথে স্মরণ করে তবে আমি তাকে এর চেয়ে উত্তম জামাতসহ স্মরণ করি। আর যদি সে আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয় তবে আমি তার দিকে এক গজ অগ্রসর হই। আর যদি সে আমার দিকে এক গজ অগ্রসর হয়, তবে আমি তার প্রতি দুই গজ বা এক পূর্ণ হাত অগ্রসর হই। আর যদি সে আমার প্রতি পদব্রজে অগ্রসর হয় তাহলে আমি তার প্রতি দৌড়ে অগ্রসর হতে থাকি।
হাদীস শরীফে আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন-
অর্থঃ আল্লাহর স্মরণে কোন কাওম যখনই বসে, তখনই তাদেরকে রহমতের ফেরেশতারা পরিবেষ্টন করে বসে এবং আল্লাহর রহমতের চাদর তাদেরকে আচ্ছাদিত করে ফেলে এবং তাদের উপর শান্তি বর্ষিত হতে থাকে এবং আল্লাহ পাক নিজেদের সাথীদের নিয়ে তাদের কথা আলোচনা করেন।
হাদীস শরীফে আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন—রোজ কেয়ামতে আল্লাহ পাক এমন এক শ্রেণীর লোক উত্তোলন করবেন যারা মোতির মিম্বরের উপর আসীন থাকবেন এবং তাদের চেহারার নূর উজ্জ্বলরূপে চমকিতে থাকবে। তারা কিন্তু নবী নন এবং শহীদও নন। এমন সময় এক বেদুঈন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর উভয় হাঁটু স্পর্শ করে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ)! তাদের পরিচয় আমাদের কাছে বিবৃত করুন, যেন আমরা তাদেরকে চিনতে পারি। উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন,তারা হলেন বিভিন্ন গোত্র ও শহরের লোক যারা একে অন্যকে আল্লাহর মহব্বতে ভালোবাসছেন এবং সম্মিলিতভাবে আল্লাহ পাকের যিকির করছেন।
হাদীস শরীফে আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন— উত্তম যিকির হচ্ছে:
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু (لآ اِلَهَ اِلّا اللّهُ) আর উত্তম দোয়া হচ্ছে আলহামদু লিল্লাহ ( ٱلْحَمْدُ لِلَّٰهِ )
হাদীস শরীফে আরো আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন—যখনই কোন বান্দাহ বিশুদ্ধ চিত্তে লা ইলাহা ইল্লাহু’ বলে, তখনই আকাশের দরজা খুলে দেয়া হয় এবং যিকির আল্লাহর আরশ পর্যন্ত চলে যায়। যদি সে গোনাহে কবীরা হতে মুক্ত থাকে।
হাদীস শরীফে আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু যিকিরের প্রতি অনুরাগীগণের না মৃত্যুর ভয় আছে, না কবরের চিন্তা আছে, আর না হাশরের ভাবনা আছে। আমি যেন দেখতে পাচ্ছি যে, তারা রোজ কেয়ামতের প্রত্যুষে এই বলে মাথা তুলছে ‘হে আল্লাহ! তোমারই জন্য সমুদয় প্রশংসা। তুমি আমাদের সমুদয় ভাবনা থেকে মুক্ত করেছ।
হাদীস শরীফে আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন—জান্নাতবাসীদের কোন আক্ষেপ থাকবে না। শুধু কেবল ঐ সময়ের জন্য তারা আক্ষেপ ও আফসোস করবে যে সময়টুকু দুনিয়ার জীবনে আল্লাহ পাকের যিকিরে ব্যয় করা হয়নি।
হাদীস শরীফে আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন ১০০ বার “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু” বলবে রোজ কেয়ামতে আল্লাহ পাক তার চেহারাকে পূর্ণ চন্দ্রের মতো সমুজ্জ্বল করে দেবেন। সে দিন তার চেয়ে উত্তম আমলকারী ছাড়া আর কাউকে অধিক মর্যাদা দেয়া হবে না ।
হাদীস শরীফে আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি দৈনিক দশ বার এই দোয়া পাঠ করবে-
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু অহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু অ লাহুল হামুদ অ হুঅ ‘আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর। তবে তার আমলনামায় বনী ইসরাঈলদের চারটি উট বোঝাই নেকী লেখা হবে।
------------
tags:
যিকিরের ফযিলত, আল্লাহর যিকিরের ফজিলত, জিকিরের ফযিলত।, যিকিরের ফজিলত, সুবাহান আল্লাহ এর ফযিলত, মহান আল্লাহর নামের ফযিলত দেখুন... islamism, যিকিরের ফযিলত মতিউর রহমান মাদানী পর্ব ৪, যিকির, বিভিন্ন জিকিরের ফজিলত, কোন জিকিরের কি ফজিলত, আল্লাহর জিকির, আল্লাহর জিকির সমূহ, যিকিরের, আল্লাহর পছন্দনীয় জিকির, আল্লাহর ক্ষমা, আল্লাহর পছন্দনীয়, আল্লাহর গুনোবাচক নাম, আল্লাহর নামে দোয়া করা, বাংলা যিকির, আলহামদুলিল্লাহ পড়ার ফজিলত ও গুরুত্ব, ইসলামিক যিকির, জিকিরের গুরুত্ব,
jikir, fazilat, jikirer fozilot, zikir ar fazilat, zakir fazilat, 70 fazilat, jikirer boyan, allah fazilat, allah jikir, islamic jikir, jikir korar fojilot, new jikir, duaer fozilot ki, allah allah jikir, jikir r dowa, giasuddin taheri jikir, jikir korar niyom, zikir e ilahi, la hawla wala quwwata illa billahil aliyyil azeem ki fazilat, bangla zikir, zikir, allah zikir, allah hu ji ki, জিকির করার ফজিলত || jikir korar fojilot by sheikh motiur rahman, wazifa