স্বর্ণ-রৌপ্যের যাকাত
নগদ মুদ্রা ও টাকার যাকাত
পণ্যদ্রব্যের যাকাত
অপরের নিকট প্রাপ্য মালের যাকাত
পশুর যাকাত
যাকাত ব্যয়ের খাতসমূহ
স্বর্ণ-রৌপ্যের যাকাত
স্বর্ণের প্রথম ২০ মিসকালের পর প্রতি ৪ মিসকালের জন্য যাকাত দুই কিরাত (এক কিরাত পাঁচ গ্রেনের সমান) এবং রৌপ্যের প্রথম ২০০ দিরহামের পর অতিরিক্ত প্রতি ৪০ দিরহামের জন্য যাকাত এক দিরহাম ৭০ গ্রেন।
স্বর্ণ-রৌপ্যের অলংকার ও বাসনপত্র এবং পোশাক-পরিচ্ছন্ন ইত্যাদিতে খচিত স্বর্ণ-রৌপ্যেরও ওজন পরিমাণে যাকাত দিতে হয়। এসব জিনিস ব্যবহারে থাকুক বা অব্যবহৃত পড়ে থাকুক সকল অবস্থায়ই যাকাত দিতে হবে। মোট কথা, নেসাব পরিমাণ হলে স্বর্ণ-রৌপ্যের সকল জিনিসেরই যাকাত দিতে হবে।
স্বর্ণ-রৌপ্যের সাথে খাদ্য মিশ্রিত কররে তাতে যে ধাতুর অংশ অধিক, তাকে অধিক অংশের মধ্যেই বিবেচনা করতে হবে। স্বর্ণ-রৌপ্যের অংশ বেশি থাকলে সবটুকু স্বর্ণ-রৌপ্যর মধ্যে গণ্য করে তদনুযায়ী যাকাত দিতে হবে । কিন্তু খাদের অংশ বেশি থাকলে তা স্বর্ণ বা রৌপ্য বলে পরিগণিত হবে না এবং পণ্যদ্রব্যরূপে না রেখে থাকলে তার যাকাতও দিতে হবে না।
খাদ মিশ্রিত টাকা-পয়সা ব্যবসায়িক লেনদেনে ব্যবহৃত হয় বলেই যাকাত দিতে হয়। কারো অধিকারে নেসাবের কম স্বর্ণ-রৌপ্য থাকলে উভয়ের মূল্য একত্রে যদি ৫২|৫ তোলা রৌপ্যের সমান হয় তাহলে মোট মূল্যের উপর যাকাত ফরজ হবে। কিন্তু স্বর্ণ ও রৌপ্য উভয়টাই নেসাব পরিমাণে থাকলে মূল্য হিসাব করার প্রয়োজন নেই; বরং এমতাবস্থায় উভয়ের যাকাত পৃথক পৃথকভাবে যথানিয়মে আদায় করতে হবে।
কারো অধিকারে নেসাব পরিমাণ বা এর অধিক স্বর্ণ-রৌপ্য আছে; কিন্তু বছর অতিবাহিত হওয়ার আগেই তৎসঙ্গে আরো স্বর্ণ-রৌপ্য জমা হল, এমতাবস্থায় উক্ত নেসাব পরিমাণ স্বর্ণ-রৌপ্যের বছরও অতিবাহিত হয়েছে বলে গণ্য করতে হবে এবং সকল স্বর্ণ-রৌপ্যের যাকাত ফরজ হবে। মোট কথা, নেসাব ঠিক থেকে বছরের মধ্যে কম-বেশি হলে এর কোনরূপ প্রতিক্রিয়া যাকাতের উপর হবে না; বরং বছরের শেষে মওজুদ মোট ধানের যাকাত দিতে হবে ।
নগদ টাকা খাঁটি রৌপ্যের হোক বা খাদ মিশানোই হোক, ফকীহগণের সর্বসম্মত মতে এর যাকাত ফরজ। কারণ, এটা দেশে প্রচলিত মূল্যমান- স্বরূপ এবং লেনদেনের
উদ্দেশ্যেই এর সৃষ্টি হয়েছে।
সুতরাং কারো নিকট ৫২|৫ তোলা রৌপ্য বা ৭৫ তোলা স্বর্ণের মূল্যের সমান নগদ টাকা থাকলে স্বর্ণ বা রৌপ্য কিছুই না থাকলেও তার যাকাত ফরজ হবে।
প্রচলিত কাগজী মুদ্রার যাকাতও এ হিসেবেই দিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, যদি আজকাল এক তোলা রৌপ্যের মূল্য পাঁচশো টাকা হয় তাহলে কারো নিকট ২,৬৫০০০ টাকা থাকলে তার যাকাত ফরজ হবে।
কেননা, এটা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্যের মূল্যের সমান। এরূপ কারো নিকট নগদ টাকা, কিছু রৌপ্য ও স্বর্ণ আছে; কিন্তু পৃথক পৃথকভাবে কোনটারই নেসাব পূর্ণ হয় না। এমতাবস্থায় এই ত্রিবিধ ধনের মোট মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্যের মূল্যের সমান হলে যাকাত ফরজ। অন্যথায় ফরজ নয়। নগদ টাকার যাকাতও চল্লিশ ভাগের এক ভাগ।
সকল জিনিসই পণ্যদ্রব্য হতে পারে। ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে জমি কেনা-বেচা করলে তাও পণ্যদ্রব্যে পরিণত হয় এবং তজ্জন্য যথানিয়মে যাকাত দিতে হয়। অথচ জমির জন্য সাধারণ ওশর ও খারাজ নির্ধারিত আছে। কিন্তু কোন দ্রব্য ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে থাকলেই তা পণ্যদ্রব্যে পরিণত হয় না বরং এ উদ্দেশ্যে কেনা-বেচা যখন সংঘটিত হয় তখনই তা পণ্যদ্রব্যে পরিণত হয়। কেননা, এগুলো ঋণ দ্বারা লব্ধ মাল ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে থাকলে পণ্যদ্রব্যে পরিগণিত হয়। কারণ, তখন তাতে ব্যবসায়ের ইচ্ছা ও কর্ম উভয়ই থাকে।
কেনার সময় ব্যবসায়ের উদ্দেশ্য না থাকলে খরিদকৃত দ্রব্য ব্যবহারের বলে গণ্য হবে। কিন্তু কোন দ্রব্য ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে সংগ্রহ করে বিক্রয়ের আগে তা ব্যক্তিগত কাজে লাগলে বা ভাড়া দিলে তা পণ্যদ্রব্যের অন্তর্ভুক্ত হবে।
ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে মাল সংগ্রহ করে পরবর্তীতে ব্যবসার উদ্দেশ্য না থাকলে তা পণ্যদ্রব্যের অন্তর্ভুক্ত থাকে না। পুনরায় তা দ্বারা ব্যবসা করার ইচ্ছা করে বিক্রয় করলে তখন ত পণ্যদ্রব্যে পরিণত হয়; তার আগে পণ্যদ্রব্যে পরিণত হয় না।
অপরের নিকট প্রাপ্য মালের দাবির তিন অবস্থা। ১। সবল, ২। মধ্যম ও ৩। দুর্বল।
যে পণ্যদ্ৰব্য ৰা প্রদত্ত ঋণ প্রকৃত মালিকের হাতে থাকলে বছর শেষে যাকাত দেয়া ওয়াজিব হয়, এক সৰল দাবি বলে। যে মাল মালিকের হাতে থাকলে যাকাত দেয়া ওয়াজিব হয় না, তাকে মধ্যম দাবি বলে। পরিধানের কাপড়, ব্যক্তিগত ক্রীতদাসের মজুরি ইত্যাদি এ শ্রেণীর মালের অন্তর্ভুক্ত। যে মাল কোন প্রকার অর্থের বিনিময়ে অর্জিত নয় একে দুর্বল দাবি বলে । মোহরানা, বিবাহ-বিচ্ছেদ পণ, হত্যাকারীর নিকট হতে নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারী কর্তৃক ক্ষতিপূরণস্বরূপ প্রাপ্ত ধন, উইল দ্বারা প্রাপ্ত সম্পত্তি,উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ প্রভৃতি এ শ্রেণীর অন্তর্গত।
সবল দাবির ক্ষেত্রে তা হাতে না আসলেও বছর শেষে তার যাকাত ওয়াজিব হয়ে থাকে। অবশ্য অন্ততপক্ষে তার ৪০ দিরহাম মূল্যের মাল হাতে আসলেই সে মালের ৪০ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিতে হবে, অন্যথায় দিতে হবে না। মধ্যম দাবির বেলায় অন্ততপক্ষে ২০০ দিরহাম মূল্যের মাল হাতে আসার পর পূর্ণ এক বছর অতিবাহিত না হলে সেগুলোর যাকাত ওয়াজিব হয় না। দুর্বল দাবির বেলায়ও এ নিয়মই প্রযোজ্য।
যে সকল পশু আরোহণ বা বোঝা বহন ইত্যাদি কাজের জন্য পোষণ করা হয় সেগুলোর যাকাত দিতে হয় না। যে সকল পশু বংশ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে চারণ-ভূমিতে বছরের অন্তত ছয় মাসের অধিক কাল প্রতিপালিত হয়, সেগুলোর যাকাত দেয়া ওয়াজিব। যেসব পশু গৃহে সরবরাহকৃত খাদ্যে বছরের অন্তত ৬ মাস প্রতিপালিত হয় সেগুলোর যাকাত দিতে হয় না। কিন্তু ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে প্রতিপালিত হয়ে থাকলে পণ্যদ্রব্য হিসেবে এগুলোরও যাকাত দিতে হবে। ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে পশু ক্রয় করে তারপর একে চারণ পশুতে পরিণত করতে ইচ্ছা করলে যে সময় থেকে একে চারণ পশুর অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে, তখন থেকেই এর বছর চারণ-পশু হিসেবে গণনা করতে হবে।
অন্ধ, পীড়িত, খঞ্জ এবং ছোট বাচ্চা পশুও নেসাব গণনার মধ্যে ধরতে হবে। কিন্তু এ প্রকার পণ্ড দ্বারা যাকাত আদায় হয় না। পশুর মধ্যে কেবল উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া এবং অশ্বের যাকাত দিতে হয়। অন্য কোন পশুর যাকাত দিতে হয় না।
যাকাতের ব্যয়ের খাতসমূহ স্বয়ং আল্লাহ্ তাআলা পবিত্র কুরআনে বর্ণনা করে দিয়েছেন। এর বাইরে যাকাতের মাল ব্যয় করা যাবে না। ইরশাদ হচ্ছে,
অর্থ: “সদ্কাসমূহ (অর্থাৎ যাকাত) একমাত্র (এসব লোকের) প্রাপ্য—ফকীর ও মিসকীনদের; আর যেসব কর্মচারী এসৰ সদ্কার কাজে নিযুক্ত আছে এবং যাদের মন রক্ষা করা আবশ্যক এবং ক্রীতদাসগণের গ্রীবা মুক্ত করার জন্য এবং ঋণগ্রস্তদের ঋণ পরিশোধে (অর্থাৎ ঋণ মুক্ত করার কাজে) আর জিহাদের কাজে অর্থাৎ, মুজাহিদদের যুদ্ধের সরঞ্জাম সংগ্রহের কাজে ও মুসাফিরের (সাহায্যের) কাজে। এ ব্যবস্থা আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত এবং আল্লাহ মহাজ্ঞানী, অত্যন্ত সূক্ষ্মদর্শী।
কোন স্থলে ব্যয় করা সঙ্গত এবং কোথায় ব্যয় করা সঙ্গত নয়, তা তিনি উত্তমভাবেই অবগত আছেন।
তফসীরে কুরতুবীতে উল্লেখ আছে, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট যাকাত হতে কিছু প্রার্থনা করলে তিনি বললেন : “আল্লাহ সদ্কা (যাকাত) বণ্টনের ভার কারো উপর এমনকি কোন নবীর উপরও অর্পণ করেননি; বরং তিনি স্বয়ং আটটি ব্যয়ের খাত নির্ধারিত করে দিয়েছেন। তুমি এই আট শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত হলে তোমাকে দিতে পারি।”
ইসলামের বিধান অনুসারে ধন-সম্পদ যে কোন আকৃতিতেই হোক না কেন, তা আলাহ তাআলার সৃষ্ট এবং তার মালিকানা-স্বত্ব মূলত তাঁরই। তাঁর দান স্বরূপ মানুষ তা লাভ করে থাকে। এ জন্যই মানুষের সম্পদ ব্যয়ের বিষয়টি আদেশ-নিষেধ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত করার পূর্ণ অধিকার তাঁর আছে। হালাল উপায়ে অর্জিত ধন-সম্পদের মালিকানা-স্বত্ব মানুষের আছে। কিন্তু এই স্বত্ব সম্পূর্ণ স্বাধীন ও লাগামহীন মোটেই নয়। তার উপর প্রকত মালিকের পক্ষ হতে সীমা, বাধ্যবাধকতা এবং নীতিমালা আরোপিত আছে।
সুতরাং যে স্থলে তিনি ব্যয় করতে আদেশ দিয়েছেন সে স্থলে অবশ্যই ব্যয় করতে হবে এবং যে স্থলে ব্যয় করতে নিষেধ করেছেন সে স্থলে ব্যয় করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ “আল্লাহর কসম! নিশ্চয়ই আমি না কাউকে দান করি আর না কাউকে দান থেকে বিরত থাকি। আমি তো
শুধু হকদারের মধ্যে এরূপে বণ্টন করে থাকি যেরূপ আমাকে আদেশ করা হয়েছে।”
-----------
tags:
যাকাত, স্বর্ণের যাকাত, স্বর্ণ ও রূপার যাকাত, যাকাতের হিসাব, স্বর্ণের যাকাত দেওয়ার নিয়ম, যাকাত দেওয়ার নিয়ম, স্বর্ণ ও রৌপ্যের যাকাত, জাকাত, যাকাত কাদের উপর ফরজ, স্বর্ণ ও রৌপের যাকাত, রৌপ্যের যাকাত, স্বর্নের যাকাত, স্বর্ণ অলংকারের যাকাত, স্বর্ণ গহনার যাকাত, স্বর্ণের যাকাত দিতে হবে, স্বর্ণ বা রৌপ্য কি ধরে যাকাত দিবেন, যাকাত স্বর্ণ নাকি রৌপ্যের হিসেবে দিতে হবে, স্বর্ণের যাকাতের নিসাব, স্বর্ণ রৌপ্যের যাকাতের হিসাব ও দেওয়ার নিয়ম, ১ লক্ষ টাকার যাকাত কত,
zakat on gold, zakat, gold, zakat on property, zakat on gold in islam, zakat on land, zakat on farms, zakat on animals, zakah, paying zakaat on gold / silver jewelry, zakat on gold -, paying zakat on gold, zakat on gold for ladies, zakat on gold jewellery, zakaat on gold / silver, how to calculate zakat on gold, zakat in islam, zakat ka bayan, zakaat on gold / silver jewelry by dr zakir naik, zakat ke masail, zakat ka tarika, sone par zakat, gold per zakat