Zakat in Islam Bangla-যাকাতের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও শর্তাবলি
সূচিপত্র:
যাকাত
যাকাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
যাকাতের আদায়ের শর্তাবলি
যাকাত আদায়ের নিয়ম
যাকাত পরিশোধের নিয়্যত
যাকাতের নিসাব
যাকাতের পরিমাণ
নগদ মুদ্রা ও টাকার যাকাত
যাকাত
যাকাত আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ পবিত্র হওয়া, বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হওয়া । আল্লামা শামী (রহঃ) বলেন : উপরোক্ত দুটি অর্থ ছাড়া যাকাত’ শব্দের আরো অর্থ আছে। যথা: বরকত, গুণকীর্তন। ইসলামী গ্রন্থসমূহে যাকাত’ শব্দ উল্লেখিত চতুর্বিধ অর্থেই ব্যবহৃত হয়। কারণ, যাকাত যাকাতদাতাকে পাপ ও কৃপণতা হতে পবিত্র করে। ধনের কিছু অংশ ব্যয় দ্বারা বাকি ধন পবিত্র হয়। এ জন্যই যাকাতরূপে প্রদত্ত ধনকে সম্পদের উচ্ছিষ্ট বলে অভিহিত করা হয়েছে এবং একে বনী হাশেমের জন্য হারাম করা হয়েছে। যেমন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্বোধন করে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন:
“আপনি তাদের ধন হতে যাকাত আদায় করুন যা দ্বারা আপনি তাদেরকে পবিত্র করে দেবেন।
যাকাতের ফলে ধন বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়। যেমন, পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:
ما أنفقتم من شيء فهو يخلفه
“তোমরা যা আল্লাহর উদ্দেশ্যে ব্যয় কর তিনি এর পরিবর্তে অন্য ধন দান করবেন। যাকাত দ্বারা ধনে বরকত হয়ে থাকে। যাকাত আদায়ের ফলে ধন কমে না। অধিকন্তু যাকাতের কারণে যাকাতদাতার গুণ প্রচার হয়ে থাকে।
ইমাম রাগেব ইসফাহানী (রহঃ) বলেনঃ “এমন তাৎপর্যপূর্ণ বৃদ্ধিকে যাকাত বলে, যা আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে দাতা বরকতস্বরূপ প্রাপ্ত হয়ে থাকে । তদ্রুপ সর্ববিধ
পবিত্রতা ও শুদ্ধিকেই যাকাত বলে না; বরং এমন অন্তস্থিত ও তাৎপর্যপূর্ণ পবিত্রতাকে যাকাত বলে যা আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে লব্ধ । মানুষ ইচ্ছা করে আপন দেহ, বস্ত্র ইত্যাদি ধৌত করে পাক-পবিত্র করে থাকে; একে যাকাত বলে না; বরং ইসলামের পরিভাষায় যাকাত ধনের ঐ অংশকেই বলে যা আল্লাহর রাস্তায় তাঁর হুকুম মতো দান করা ফরজ।
অন্য দুটি কারণেও একে যাকাত নামে অভিহিত করা যেতে পারে।
যথাঃ
১। কুরআন ও হাদীসের মর্মানুসারে বুঝা যায় যে, যাকাতই ধনে বরকত ও বৃদ্ধির হেতু এবং
২। যাকাত আদায়ে মানুষ আত্মশুদ্ধি লাভ করে থাকে।
মোট কথা, পবিত্র কুরআন ও হাদীসের পরিভাষায় ধনের সেই নির্ধারিত অংশকেই যাকাত বলে যা আল্লাহর পথে ব্যয় করা মানুষের উপর ফরজ করা হয়েছে। ইসলামী ফিকাহ শাস্ত্রে এই অথেই যাকাত শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে ।
যাকাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
যাকাত ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ। প্রত্যেক ধনবান মুসলমানের উপর যাকাত আদায় করা ফরজ। যাকাত আদায়ের আদেশ দানকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্বোধন করে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেছেন :
তাদের মালামাল থেকে যাকাত গ্রহণ করুন যাতে আপনি এর মাধ্যমে সেগুলোকে পবিত্র ও বরকতময় করতে পারেন এবং তাদের জন্য দোয়া করুন, নিশ্চয়ই আপনার দেয়া তাদের জন্য প্রশান্তির কারণ । আর আল্লাহ শ্রোতা ও জ্ঞানী।
যাকাত আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নির্ধারিত কর্তব্য এবং একটি ইবাদত। পূর্ববর্তী সকল নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালাম-এর উম্মতের উপরও এটা ধমীয় ফরজরূপে প্রচলিত ছিল। তবে কত ধনের মালিক হলে যাকাত দিতে হবে তার পরিমাণ এবং যাকাত ব্যয়ের খাত বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নরূপ ছিল। কিন্তু ধনের কিছু অংশ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়ের রীতি আগেকার সকল উম্মতের মধ্যেই বিদ্যমান ছিল। এমন কোন উম্মতই অতিবাহিত হয়নি যাদের প্রতি দরিদ্রকে সাহায্য ও স্বজাতির সেবা করার আদেশ ছিল না এবং তা ধর্মের অপরিহার্য অংশরূপে নির্ধারিত হয়নি। এ ব্যাপারে ইসলামের বৈশিটা এই যে, ইসলাম কেবল সাহায্য-সেবার আদেশ দিয়েই তুষ্ট হয়নি, বরং প্রতিটি ধনবান মুসলমানের উপর যাকাত এক বিশেষ ফরজ। অর্থাৎ, ইসলামী শরীয়ত ধনবানের উপর যাকাত ধার্য করে দিয়েছে এবং সকল আয় পুংখানুপুঙ্খরূপে হিসাব করে প্রতি বছর যাকাত আদায় করা কর্তব্যরূপে নির্ধারিত করে দিয়েছে। তদুপরি এমন গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে যে, ইসলামী বিধানে নামাযের পরই এর স্থান।
পবিত্র কুরআনের প্রায় সর্বত্রই নামাযের সাথে সাথে যাকাতের আদেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া হাদীস শরীফে যাকাত সম্পর্কে হুযুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অসংখ্য বাণী রয়েছে। আর পবিত্র কুরআন ও হাদীসের উদ্ধৃতিসমূহ নিঃসন্দেহে এটাই প্রমাণ করে যে, মুসলমানদের দলভুক্ত ও মুসলমানদের ধর্মীয় ভাইরূপে পরিগণিত হওয়া এবং জান-মালের নিরাপত্তার অধিকারী হওয়ার জন্য আন্তরিক ঈমানের সঙ্গে সঙ্গেই বাহ্য ‘আমলরূপে নামাযের ন্যায় যাকাত আদায়েরও
প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যাকাতকে ফরজরূপে অস্বীকার করে মুসলমান রূপে গণ্য হওয়া যাবে না এবং এমতাবস্থায় জান-মালের নিরাপত্তা হতেও বঞ্চিত হবে । পবিত্র কুরআনের প্রত্যেক স্থানে নামায ও যাকাত এই দ্বিবিধ কাজের একত্র বর্ণনা দ্বাৰা এটাই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যে, নামায ও যাকাত, এ দুটি কর্মই জাতির ইসলামী
জিন্দেগীর প্রাথমিক নিদর্শন। সমষ্টিগতভাবে তা সম্পূর্ণরূপে বর্জন করে কোন জাতি মুসলমান থাকতে পারে না। এ কারণেই সাহাবায়ে কেরাম রাদিআল্লাহু আনহু যারা যাকাত দিতে অস্বীকার করেছে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছেন ।
সদ্কা-খয়রাত সম্পর্কে হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম-এর উপদেশ সুদূর প্রসারিত। তিনি নির্ধারিত পরিমাণ দানের উপদেশ প্রদান করেননি; বরং তিনি যথাসর্বস্ব দান করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তজ্জন্য ইসলামের ন্যায় কোন সুনির্দিষ্ট শৃঙ্খলা তিনি প্রতিষ্ঠিত করেননি বলে তাঁর এই শিক্ষা কেবল ধার্মিকতা ও সংসার বর্জনের সর্বোচ্চ সোপানরূপেই পরিগণিত ছিল এবং খ্রিষ্ট ধর্মের প্রাথমিক যুগে যখন পরস্পর ভ্রাতৃত্ব ও আন্তরিকতার ভিত্তিতে ধর্ম-ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল, সে সময় ব্যতীত কোনকালেই উক্ত শিক্ষা ফলপ্রসূ হয়নি ।
যাকাতের আদায়ের শর্তাবলি
১। যাকাত আদায়কারীকে অবশ্যই মুসলমান হতে হবে। কারণ, কোন অমুসলমানের উপর যাকাত ফরজ নয়।
২। যাকাত আদায়কারীকে অবশ্যই প্রাপ্তবয়স্ক (বালেগ) হতে হবে। নাবালেগের মালিকানা স্বত্বে যত ধনই থাকুক না কেন, তার কোন যাকাত দিতে হয় না।
৩। যাকাত আদায়কারী সুস্থ মস্তিষ্ক হতে হবে। পাগলের ধনের যাকাত দিতে হয়। যদি তার মস্তিষ্ক বিকৃতি সারা বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে থাকে।
৪। ধনের পূর্ণ মালিকানা স্বত্ব থাকা চাই। যার অধিকারে ধন আছে, কিন্তু সে তার মালিক নয়, তবে তাকে যাকাত দিতে হবে না।
৫। স্বাধীন হওয়া। কারণ, ক্রীতদাসের উপর যাকাত ফরজ নয়।
৬। নেসাব পরিমাণ ধন থাকা। এর কম হলে যাকাত ফরজ নয়।
৭। ধন বাস্তব প্রয়োজনের অতিরিক্ত হওয়া। কারণ, জীবন ধারণের জন্য আবশ্যক দ্রব্যাদি যেমন—ৰাসগৃহ, পরিধানের বস্ত্র, ব্যবহারের বাসনপত্র, গৃহের আসবাব-পত্র ইত্যাদির কোন যাকাত নেই।
৮। ধন পর্ণ এক বছর অধিকারে থাকা। পূর্ণ এক বছর ধন অধিকারে না থাকলে সে ধনে যাকাত ফরজ হয় না।
৯। ধন বর্ষিষ্ণু হওয়া। যেমন, পণ্যদ্রব্য, পত্ত ইত্যাদি। ধন বৃদ্ধি না হলে প্রয়োজনের অতিরিক্ত থাকলেও তাতে যাকাত দিতে হয় না। যেমন প্রয়োজনের অতিরিক্ত বাসগৃহ, মোটর গাড়ি, গৃহের আসবাবপত্র ইত্যাদি।
যাকাত আদায়ের নিয়ম
ইসলামের পরিভাষায় যে সব ধন-সম্পদকে ‘আমওয়ালে জাহেরা (প্রকাশ্য মাল) বলে, ঐগুলোর যাকাত আদায় করার দায়িত্ব মুসলমানদের রাষ্ট্রপ্রধানের উপর ন্যস্ত রয়েছে। খনিজ দ্রব্য, কৃষিজাত দ্রব্য ও পশু এ শ্রেণীর মালের অন্তর্ভুক্ত। এসব কেউই গোপন করে বা সিন্দুকে ভরে রাখতে পারে না; বরং এগুলোর যাকাত মুসলমানদের রাষ্ট্রপ্রধানের নিকট দান করা তার কর্তব্য। যদি মালিক স্বয়ং এসবের যাকাত আদায় করেছেন বলে দাবি করেন তবুও পুনরায় তা আদায় করতে হবে। কারণ, এ সকল ধনের যাকাত ব্যক্তিগতভাবে দেয়ার কোন অধিকার তার নেই। কিন্তু অবশিষ্ট গোপন ধনের যাকাত আদায় করার জন্য গৃহে প্রবেশপূর্বক তদন্ত করে দেখার এবং যাকাত আদায় করার অধিকার শরীয়ত কাউকে দেয়নি। স্বর্ণ-রৌপ্য ও তার অলংকার ইত্যাদি এ শ্রেণীর ধনের অন্তর্ভুক্ত। এসব ধনের যাকাত আদায় করার দায়িত্ব স্বয়ং মালিকের উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। তার ইচ্ছানুযায়ী সে তা মুসলমানদের রাষ্ট্রপতির নিকটও দিতে পারে অথবা নিজেই ফকীর-মিসকীনদের মধ্যে বণ্টন করে দিতে পারে। আর সে রাষ্ট্রপতির নিকট এসব গোপন মালের যাকাত দিলেও তার নিকট হতে এ হিসাব লওয়ার কারো অধিকার নেই যে, তার সর্বমোট কত ধন ছিল এবং সে যাকাতরূপে কত দান করেছে। তবে এ কথা সত্য যে, সাহাবায়ে কেরাম রাদি আল্লাহু আনহু বাইতুল মালে যাকাত দানে অভ্যস্ত ছিলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ হতে তাঁদের উপর কোন প্রকার বাধ্যবাধকতা ছিল না ।
হুযুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জমানায় অধিকাংশ পণ্য গুদামে সংরক্ষিত থাকত। এ জন্য সেগুলোর যাকাত যাকাত-বিভাগ সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের দ্বারা আদায় করা হত না। হযরত ওমর ফারুক রাদি আল্লাহু আনহু-এর খেলাফতকালে পণ্যদ্রব্য বিভিন্ন শহর ও বাজারে আমদানি-রপ্তানি শুরু হলে তখন থেকেই পশুর ন্যায় পণ্যদ্রব্য প্রকাশ্য ধনে পরিণত হয়। সুতরাং মুসলমান ব্যবসায়ীদের নিকট হতে পণ্যদ্রব্যের যাকাত এবং অমুসলমান ব্যবসায়ীদের নিকট হতে নির্ধারিত চুক্তি অনুসারে হিসাব করে আদায় করার জন্য হযরত ওমর ফারুক রাদি আল্লাহু আনহু বিভিন্ন এলাকায় কর্মচারী নিযুক্ত করেন। এরপর হযরত ওমর বিন আবদুল আযীয (রহঃ)-ও তদ্রূপ যাকাত ও কর আদায়ের জন্য শহরের রাস্তায় রাস্তায় কর্মচারী বসান। সাহাবা এবং তাবেঈন রাদি আল্লাহ আন্হুগণ হযরত ওমর ফারুক রাদি আল্লাহ আন্হু এবং হজরত ওমর বিন আবদুল আযীয (রহ:)-এর অবলম্বিত এ ব্যবস্থা পছন্দ করেন, কেউ এ ব্যাপারে কোন প্রকার প্রতিবাদ উত্থাপন করেননি। ইমাম আবুবকর জাস্সাস (রহঃ) প্রণীত আহকামুল কোরআন গ্রন্থে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে ।
যাকাত পরিশোধের নিয়্যত
যাকাত পরিশোধের জন্য নিয়্যত বা সংকল্প ফরজ। যাকাত আদায়ের নিয়্যত না করে শুধু দান করলে যাকাত আদায় হবে না। কোন গরিব-মিসকীনকে যাকাত দেয়ার সময়
অবশ্যই মনে মনে এ নিয়্যত করতে হবে: আমি যাকাত দিচ্ছি। শুধু মনে মনে এরূপ নিয়্যত করলেই যথেষ্ট হবে। মুখে বলা জরুরি নয়। এমনকি মুখে বলা উত্তম ও নয় । নিয়্যত না করে দান করলে যাকাত আদায় হবে না; বরং নিয়্যত ছাড়া যা প্রদান করা হয়েছে তা পুনরায় দিতে হবে। নিয়্যত ছাড়া যা দেয়া হল তাতে নফল সদ্কার সওয়াব পাওয়া যাবে।
যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তিকে যাকাত দেয়ার সময় নিয়্যত না করে দিয়ে থাকলে এ লোকের নিকট যাকাতস্বরূপ প্রদত্ত মাল বর্তমান থাকা পর্যন্ত নিয়্যত করলেও যাকাত
আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু মাল ব্যয় হয়ে যাবার পর নিয়ত করলে আদায় হবে না; বরং এ যাকাত পুনরায় আদায় করতে হবে।
উপযুক্ত পাত্র পাওয়া গেলে যাকাত দেয়া হবে, এ উদ্দেশ্যে যাকাতের মাল পৃথক করে রাখা হল; কিন্তু দানের সময় যাকাতদাতা যাকাতের নিয়্যত করতে ভুলে গেল, এমন
অবস্থায় যাকাত আদায় হয়ে যাবে। মোট কথা, ধন পৃথক করার সময় অথবা উপযুক্ত পাত্রকে দেয়ার সময় যাকাতের নিয়্যত করলেই চলবে । কিন্তু কোন সময়ই নিয়্যত না
করলে যাকাত আদায় হবে না।
যাকাত গ্রহীতাকে জানাবার প্রয়োজন হয় না যে, তাকে যাকাত দেয়া হচ্ছে। এ জন্যই পারিতোষিকের নামে গরিব-মিসকীনকে কিছু দান কালে মনে মনে যাকাতের নিয়্যত করলেও যাকাত আদায় হয়; বরং প্রিয়জনকে এরূপেই দেয়া উত্তম। কারণ, যাকাত গ্রহণে তারা তখন সংকোচ বা লজ্জাবোধ করবে না।
ধনী ব্যক্তি কোন গরিব-মিসকীনকে কিছু টাকা-পয়সা ইত্যাদি কর্জ দিয়ে যাকাতের নিয়্যতে মাফ করে দিলে যাকাত আদায় হবে না। কিন্তু এমন ঋণগ্রস্ত লোককে যাকাত দিলে সে যদি তা দ্বারা ঋণ পরিশোধ করে তবে তা গ্রহণ করা উক্ত ধনীর জন্য জায়েয আছে।
যাকাতের নিসাব
যে পরিমাণ মাল থাকলে যাকাত ফরজ হয়, ইসলামী পরিভাষায় তাকে নেসাব বলে। নেসাবের কম হলে যাকাত দিতে হয় না। রৌপ্যের নেসাব দুশো দিরহাম। আমাদের
দেশে প্রচলিত ওজন হিসেবে ৫২ তোলা ৬ আনা ৫ রতির সমান । স্বর্ণের নেসাব ২০ মিসকাল। আমাদের প্রচলিত ওজন হিসেবে ৭ তোলা ৬ মাশার সমান । পণ্যদ্রব্যের নেসাব ও এর মূল্যের উপর ভিত্তি করেই নির্ধারিত হয়েছে। অতএব, এর নেসাবও রৌপ্যের নেসাবের মতো।
যাকাতের পরিমাণ
স্বর্ণ-রৌপ্য ও পণ্যদ্রব্যের যাকাত ৪০ ভাগের এক ভাগ, সিঞ্চিত জমির উৎপন্ন শস্যের যাকাত ২০ ভাগের ১ ভাগ, অসিঞ্চিত জমির উপন্ন শস্যের যাকাত এক-দশমাংশ এবং গনীমতের মাল, খনিজ দ্রব্য ও ভূগর্ভে প্রোথিত ধনের যাকাত এক-পঞ্চমাংশ।
নগদ মুদ্রা ও টাকার যাকাত
নগদ টাকা খাঁটি রৌপ্যের হোক বা খাদ মিশানোই হোক, ফকীহগণের সর্বসম্মত মতে এর যাকাত ফরজ। কারণ, এটা দেশে প্রচলিত মূল্যমান- স্বরূপ এবং লেনদেনের
উদ্দেশ্যেই এর সৃষ্টি হয়েছে।
সুতরাং কারো নিকট ৫২|৫ তোলা রৌপ্য বা ৭৫ তোলা স্বর্ণের মূল্যের সমান নগদ টাকা থাকলে স্বর্ণ বা রৌপ্য কিছুই না থাকলেও তার যাকাত ফরজ হবে।
প্রচলিত কাগজী মুদ্রার যাকাতও এ হিসেবেই দিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, যদি আজকাল এক তোলা রৌপ্যের মূল্য পাঁচশো টাকা হয় তাহলে কারো নিকট ২,৬৫০০০ টাকা থাকলে তার যাকাত ফরজ হবে।
কেননা, এটা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্যের মূল্যের সমান। এরূপ কারো নিকট নগদ টাকা, কিছু রৌপ্য ও স্বর্ণ আছে; কিন্তু পৃথক পৃথকভাবে কোনটারই নেসাব পূর্ণ হয় না। এমতাবস্থায় এই ত্রিবিধ ধনের মোট মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্যের মূল্যের সমান হলে যাকাত ফরজ। অন্যথায় ফরজ নয়। নগদ টাকার যাকাতও চল্লিশ ভাগের এক ভাগ।
-----
tags:
যাকাত, যাকাত দেয়ার নিয়ম, যাকাত দেওয়ার নিয়ম, যাকাত কাদের উপর ফরজ, জাকাত, যাকাতের হিসাব, এক লক্ষ টাকায় কত টাকা যাকাত, যাকাত দেওয়ার নিয়ম, যাকাত ক্যালকুলেটর, ১ লক্ষ টাকার যাকাত কত, কত টাকা হলে যাকাত দিতে হবে, zakat, zakaat, zakat in islam, zakat ke masail, zakat al mal, zakat calculation, zakath, zakat ka tarika, zakah, jakat, zakat ka bayan, zakat dr israr, zakat ki sharait, zakat calculator, jakat waz, zakat in islam bangla, zakat kin par farz hai, zakat kis par farz hai, farz zakat, kira zakat, zakat naik, zakat rules, coran zakat, zakat allah, zakat harta, paying zakat, zakat bangla, zakat on gold, hadith zakat, zakat fitrah, zakat calculation bangla, জমির যাকাত, যাকাত ২০২০, ১ লাখ টাকায় যাকাত কত, যাকাত ইসলাম, যাকাত এর নিয়ম, বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয়, যাকাতের খাত, যাকাত কার উপর ফরজ, কত টাকা থাকলে যাকাত