নামাযে মাকরূহ ও নিষিদ্ধ কাজ
নামায পড়া অবস্থায় যে সব কাজ করলে গোনাহ্ হয় এবং নামাযে সওয়াব কম হয়; কিন্তু নামায নষ্ট হয় না এরূপ কাজকে মাকরূহ বলা হয়।
১। নামাযের মধ্যে শরীর, কাপড় কিংবা অলংকারাদি নাড়াচাড়া করা, দাড়িতে অনর্থক হাত বুলানো বা ধুলাবালি ঝাড়া, কংকর সরানো , লুঙ্গি বা পাঞ্জাবী এমনিতে ধরে উঠিয়ে রাখা, টুপি নাড়াচাড়া করা মাকরূহ। অবশ্য যদি কোন কারণে সেজদা করা যায় না এমন পরিস্থিতিতে একবার কি দুবার হাত দিয়ে তা সরিয়ে দেয়া জায়েয আছে।
২। নামাযের মধ্যে হাতের কিংবা পায়ের আঙ্গুল মটকানো ।
৩। কোমরের উপর হাত রেখে দাঁড়ানো ।
৪। ডানে বামে সামনে বা এদিক ওদিক মুখ ফিরিয়ে দেখা মাকরূহ। অবশ্য ঘাড় বা মুখ না ফিরিয়ে শুধু চোখের কোণ দিয়ে ইমামের বা কাতারের উঠা-বসা দেখে নেয়া দুরস্ত আছে। কিন্তু নিতান্ত প্রয়োজন ব্যতীত এরূপ করা অনুচিত।
৫। নামাযের মধ্যে চারজানু হয়ে (আসন গেড়ে) বসা, কুকুরের মতো বসা, হাঁটু খাড়া করে চুতড় ও হাত মাটিতে রেখে বসা, মেয়েদের উভয় পা খাড়া রেখে বসা মাকরূহ।
৬। নামাযে পুরুষেরা সেজদার মধ্যে হাত বা পা বিছিয়ে রাখা মাকরূহ। অবশ্য রোগ-ব্যাধির কারণে যেভাবে বসার হুকুম আছে, যদি সেভাবে বসতে না পারে, যেভাবে পারে সেভাবেই বসবে, ঐ সময় কোন প্রকার মাকরূহ হবে না।
৭। নামাযের মধ্যে হাত উঠিয়ে ইশারা করে কারো সালামের জওয়াব দেয়া মাকরূহ। মুখে সালামের জওয়াব দিলে নামায নষ্ট হয়ে যাবে।
৮। নামাযের মধ্যে ধুলা বালি লাগার ভয়ে কাপড় গুটিয়ে বা সামলিয়ে রাখা মাকরূহ।
৯। যে স্থানে এরূপ আশংকা হয় যে, হয়তো কেউ নামাযের মধ্যে হাসিয়ে দেবে, বা মন এদিক-ওদিকে চলে যাবে কিংবা লোকের কথাবার্তায় নামাযে ভুল হয়ে যাবে, সেরূপ স্থানে নামায পড়া মাকরূহ।
১০। কেউ কথাবার্তা বলছে বা কোন কাজ করছে, তার পিঠের দিকে মুখ করে নামায পড়া মাকরূহ নয়। কিন্তু আশপাশে অন্য জায়গা থাকলে এরূপ স্থানে নামায শুরু করা উচিত নয়। কেননা, হয়তো তার যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে এবং নামাযের কারণে যেতে না পারায় বিরক্তি বা কষ্ট অনুভব করতে পারে কিংবা তার কোন ক্ষতি বা কষ্ট হয়ে যেতে পারে অথবা হয়তো সে জোরে কথা শুরু করে দিতে পারে এবং সে কারণে নামায ভুল হতে পারে—ইত্যাদি কারণে কারো মুখের বা পিঠের দিকে মুখ করে নামায পড়া মাকরূহ।
১১। ছবিওয়ালা জায়নামায রাখা মাকরূহ এবং ঘরে ফটো রাখা কঠিন গুনাহ। অবশ্য, যদি কোনখানে পাক বিছানায় ছবি থাকে এবং তার উপর নামায পড়া হয় তবে নামায হয়ে যাবে; কিন্তু ছবির উপর সেজদা করবে না, পা রেখে দাঁড়াবে। ছবির উপর সেজদা করলে নামায মাকরূহ হবে।
১২। নামাযীর সামনে বা উপরে অর্থাৎ ছাদ বা বারান্দায় বা ডানে কি বামে যদি ছবি থাকে, তবে নামায মাকরূহ হবে। (পেছনের দিকে ছবি থাকলেও মাকরূহ হবে না।) ছবি যদি এত ছোট হয় যে, দাড়ালে দেখা যায় না কিংবা ছবি পূর্ণাঙ্গ নয় বরং মাথা কাটা এবং অস্পষ্ট, তবে কোন দোষ নেই। তা যে দিকেই থাকুক নামায মাকরূহ হবে না।
১৩। প্রাণীর ছবিওয়ালা কাপড় পরে নামায পড়া মাকরূহ।
১৪। নামাযের মধ্যে আয়াত, সূরা বা তাসবীহ্ আঙ্গুলে গণনা করা মাকরুহ। যদি হিসাব শুধু আঙ্গুল টিপিয়ে ঠিক রাখে তবে মাকরূহ হবে না।
১৫। প্রথম রাকআত অপেক্ষা দ্বিতীয় রাকআত (তিন আয়াত বা ততোধিক পরিমাণ) লম্বা করা মাকরূহ।
১৬। কোন নামাযের কোন সূরা এমনভাবে নির্দিষ্ট করে লওয়া যে, কখনো সেই সূরা ছাড়া অন্য সূরা পড়বে না, তাও মাকরূহ ।
১৭। কাঁধের উপর রুমাল (বা অন্য কোন কাপড়) ঝুলিয়ে রেখে নামাজ পড়া মাকরূহ ।
১৮! (ভালো লোকের সমাজে যেতে লজ্জা বোধ হয় এমন) অত্যন্ত খারাপ ও ময়লা কাপড় পরে নামায পড়া মাকরূহ। অবশ্য যদি অন্য কাপড় না থাকে, তবে মাকরূহ হবে না, (কনুইর উপর আস্তিন গুটিয়ে নামায পড়া মাকরূহ।)
১৯। টাকা-পয়সা, সিকি-আদলী ইত্যাদি বা অন্য কোন জিনিস মুখের মধ্যে চেপে রেখে নামায পড়া মাকরূহ। যদি এমন কোন জিনিস হয় যাতে কুরআন পড়া যায় না, তবে নামাযই হবে না।
২০। প্রস্রাব পায়খানা (বা বায়) চেপে রেখে নামায পড়া মাকরূহ।
২১। বেশি ক্ষুধার সময় খানা তৈরি থাকলে খানা খেয়ে তারপর নামায পড়বে, নতুবা (খাবার চিন্তায়) নামায মাকরূহ হয়ে যাবে। অবশ্য যদি নামাযের ওয়াক্ত চলে - যাওয়ার মতো হয় বা জামাআত ছুটে যাওয়ার ভয় হয়, তাহলে আগে নামায পড়ে নেবে।
২২। চক্ষু বন্ধ করে নামায পড়া ভালো নয়। কিন্তু যদি চক্ষু বন্ধ করলে অন্তর ঠিক হয়ে যায় তবে চক্ষু বন্ধ করে নামায পড়ায় কোন দোষ নেই।
২৩। নামাযের মধ্যে মুখ খুলে হাই ছাড়া মাকরূহ।
২৪। বিনা প্রয়োজনে থুথু ফেলা বা নাক ঝাড়া মাকরূহ। যদি ঠেকা পড়ে, তবে থুথু বা সিকনি কাপড়ের কোণ বা রুমাল নিয়ে মুছে ফেলবে, তাতে নামায নষ্ট হবে না। কিন্তু ডান দিকে বা কেবলার দিকে জায়গা থাকলেও সে দিকে থুথু ফেলবে না, বাম দিকে থুথু ফেলে দেবে।
২৫। নামাযের মধ্যে (মশা, উকুন বা ছারপোকা কামড়ালে ওদেরকে মারা ভালো নয় , আস্তে হাত দিয়ে তাড়িয়ে দেবে এবং না কামড়ালে হাত দিয়ে তাড়ানো মাকরূহ। (এ সব মেরে মসজিদে ফেলা মাকরূহ। যদি কষ্ট দেয়, তবে মেরে বাইরে ফেলে দেবে।)
২৬। ফরজ নামাযে বিনা প্রয়োজনে দেয়াল, খুঁটি বা অন্য কোন জিনিসের উপর ভর দিয়ে দাঁড়ানো মাকরূহ।
২৭। কোন কোন লোক এত তাড়াতাড়ি নামায পড়ে যে, সূরা বা আয়াত খতম হওয়ার দুই কি এক লফয বাকি থাকতেই রুকূতে চলে যায় এবং ঐ অবস্থায় সূরা বা আয়াত খতম হয়, এরূপ করা মাকরূহ ।
২৮। পায়ের জায়গা হতে সেজদার জায়গা যদি আধ হাত অপেক্ষা উঁচু হয়, তবে নামায দুরস্ত হবে না, যদি আধ হাত বা আধ হাতের চেয়ে কম উঁচু হয়, তবে নামায হয়ে যাবে; কিন্তু বিনা প্রয়োজনে এরূপ করা মাকরূহ।
২৯। যে কাপড় যেরূপে পরিধান করার নিয়ম আছে নামাযের মধ্যে তার বিপরীতরূপে ব্যবহার করা মাকরূহ। যেমন যদি কেউ চাদর বা কম্বল এমনভাবে গায়ে দেয় যে, দুই কাঁধের উপর দিয়ে দুই কোনা ঝুলিয়ে দেয়, কোণ ফিরিয়ে কাঁধের উপর ছড়িয়ে না দেয়, তবে তা মাকরূহ। অবশ্য যদি ডান কোনা বাম কাঁধের উর দিয়ে ঝুলিয়ে ব্যবহার করে তবে মাকরূহ হবে না।
৩০। টুপি বা পাগড়ী ছাড়া খোলা মাথায় নামায পড়া মাকরূহ। অবশ্য যদি কেউ আল্লাহর সামনে আযিযী দেখাবার উদ্দেশ্যে টুপি বা পাগড়ী ছাড়া খোলা মাথায় নামায পড়ে, তবে তা মাকরূহ হবে না।
৩১। নামাযের মধ্যে টুপি বা পাগড়ী মাথা হতে পড়ে গেলে তৎক্ষণাৎ এক হাত দিয়ে তা উঠিয়ে মাথার পরে নেয়া ভালো। কিন্তু যদি একবারে বা এক হাত দিয়ে উঠিয়ে পরতে না পারে তবে উঠাবে না।
৩২। পুরুষদের কনুই পর্যন্ত বিছিয়ে দিয়ে সেজদা করা মাকরূহ তাহরীমী। |
৩৩। সম্পূর্ণ মেহরাবের ভেতর দাঁড়িয়ে ইমামের নামায পড়ানো মাকরূহ তানযীহী। অবশ্য পা মেহরাবের বাইরে রেখে সেজদা মেহরাবের ভেতরে রাখলে মাকরূহ হবে না।
৩৩। অকারণে শুধু ইমাম এক হাত বা ততোধিক পরিমাণ উঁচু জায়গায় দাঁড়ানো মাকরূহে তাহযীহী। যদি ইমামের সঙ্গে আরো দুই-তিন জন লোক দাঁড়ায় তবে মাকরূহ হবে না; কিন্তু শুধু একজন হলে মাকরূহ হবে। কেউ কেউ বলেন: এক হাতের চেয়ে কম উঁচু হলেও সাধারণ দৃষ্টিতে উঁচু দেখা যায়, তবে তাও মাকরূহ হবে।
৩৫। যদি সব মুক্তাদী উপরে এবং ইমাম একা নিচে দাঁড়ায় তবে তা মাকরূহ হবে । অবশ্য যদি জায়গার অভাবে এরূপ করে বা ইমামের সাথে কিছু সংখ্যক মুক্তাদী ও নিচে দাঁড়ায় তাহলে মাকরূহ হবে না।
৩৬। রুকূ, সেজদা ইত্যাদি কাজ ইমামের আগে আগে করা মুক্তাদীর জন্য মাকরুহ তাহরীমী।
৩৭। ইমামের কেরাআত পড়ার সময় মুক্তাদীর দোয়া, কালাম, সূরা ফাতেহা বা অন্য কোন সূরা পড়া মাকরূহ তাহরীমী। কেননা, নীরবে ইমামের কেরাআতের দিকে কান রাখা ওয়াজিব।
৩৮। আগের কাতারে জায়গা থাকতে পেছনের কাতারে দাঁড়ানো একা একা এক কাতারে দাঁড়ানো মাকরূহ। অবশ্য যদি সামনের কাতারে জায়গা না থাকে তবে একা পেছনের কাতারে দাঁড়ানো জায়েয।
৩৯। টুপি ছাড়া পাগড়ী বাঁধলে যদি মাথার তালু খোলা থাকে তবে তা মাকরূহ হবে।
৪০। নামাযের কেয়ামে যদি এক পায়ের উপর ভর দেয়া হয় হবে তাও মাকরূহ।
৪১। যদি দুই পায়ের মধ্যখানে কোন ফাঁক না রেখে দাঁড়ানো হয়, তাও মাকরূহ।
৪২। পাঞ্জাবী বা জুব্বা কাছে থাকা সত্ত্বেও যদি শুধু গেঞ্জি গায়ে দিয়ে নামায পড়া হয় বা খালি গায়ে নামায পড়া হয় তাও মাকরূহ।
৪৩। ভিজা লুঙ্গী পরে বা গামছা গায়ে দিয়ে নামায পড়াও মাকরূহ।
৪৪। খালি মাথায় নামায পড়া মাকরূহ।
৪৫। নামাযে দাঁড়িয়ে এক পা দিয়ে অন্য পা চুলকানো মাকরূহ।
৪৬। নামায অবস্থায় দাঁত দিয়ে হাতের নখ কাটা মাকরূহ।
৪৭। নামাযের প্রতি রাকআতে একাধিকবার শরীর চুলকানো মাকরুহ।
৪৮। বিনা ওজরে নাভির উপরে হাত বাঁধা মাকরূহ ।
---------
Tags: নামাজের নিষিদ্ধ সময়, নামাজের মাকরুহ, নামাজের মাকরুহ সময়, নামাজের মাকরুহ সময় কয়টি, নামাযের নিষিদ্ধ সময় কখন, নামাজের নিষিদ্ধ সময় সমূহ, যে সময়ে নামাজ পড়া মাকরূহ, ফজর নামাজের নিষিদ্ধ সময় ২০২০, নামাজ শিক্ষা, নামাজের মাকরুহ সমূহ, নামাজের মাকরুহ ওয়াক্ত, নামাজের মাকরুহ সমুহ, নামাজ মাকরুহ কারণ গুলো কী কী, নামাজের নিয়ত, তারাবি নামাজ,
namazer makru, namajer makruh, namajer 10 makruh, namajer makruh somoy, namajer makro, namaj makruh, what is namajer makruh?, namazer makruh somoy, namazer makruh somuh, ki ki karone namaj makruh hoy, namaz er makruh somuho, namajer, namajer oyakto, namaj sikkha, namajer karon, makruh in prayer, 10 makruh in prayer, namajar masalah, tarabi namajer niot, namajer sothik time, makruh in the prayer, namaz ar makrooh waqt, namazer rules