হযরত শীস (আঃ)-এর বিবরণ -Hazrat Shees (AS) Bangla

হযরত শীস (আঃ)-এর বিবরণ


হযরত শীস (আঃ)-এর বিবরণ 


হযরত আদম (আঃ)-এর মৃত্যুকালে তিনি যে সন্তান-সন্ততি রাখিয়া যান তাহাদের মধ্যে হযরত শীস (আঃ) ছিলেন জ্ঞানে, গুণে, শিক্ষায়, দীক্ষায় এবং ধার্মিকতায় সবার শ্রেষ্ঠ। তাঁহাকেই হযরত আদম নিজের স্থলাভিষিক্ত করিয়া যান এবং নিজের অন্যান্য সমস্ত আওলাদ ফরজন্দকে এই মর্মে নসিহত করিয়া যান যে, তাহারা যেন সকলে হযরত শীসের আদেশ মানিয়া চলে । হযরত শীস (আঃ)-কে আলাহ তায়ালা নবুয়ত ও প্রদান করিয়াছিলেন । বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থে এইরূপ একটি হাদীস উক্ত হইয়াছে যে, হযরত আবু যর গিফারী (রাঃ) হতে বর্ণিত রহিয়াছে, হুযুরে পাক (সাঃ) এরশাদ করিয়াছেন, নবুয়ত লাভ করিবার পর আল্লাহ তায়ালা শীস (আঃ)-এর উপরে পঞ্চাশ খানা সহিফা (ধর্মবিধান পুস্তিকা) নাযিল করিয়াছিলেন।

হযরত শীস (আঃ) অবশ্য তাঁহার ভ্রাতাদের সাথে একান্নভুক্ত ছিলেন। কিন্তু তিনি চাষ-বাস বা কৃষিকাজ-কর্ম করিতেন না। ঐসব কাজ  তাঁহার  ভাইগণ করিত এবং তাহাতে যে ফসল উৎপন্ন হইত, তাহারা উহার একটা নির্দিষ্ট অংশ হযরত শীস (আঃ)-কে এমনিই দিয়া দিতেন। তিনি সংসারের এইসব কাজকর্ম করিবার ও সময় পাইতেন না। কেননা নিজে যেমন সবাসর্বদাই ধর্মকর্মে ব্যস্ত থাকিতেন, তেমন আওলাদে আদমগণের মধ্যে আলাহ তায়ালার দ্বীন প্রচার, ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান এবং তাহাদের মধ্যকার বিবাদ-বিসম্বাদ, ঝগড়া-কলহের বিচার ব্যবস্থা ও সদাচরণ, সৎকাজ প্রভৃতি  শিক্ষাদান ইত্যাদি কাজেই তিনি মশগুল থাকিতেন ।

কিছুদিন এইভাবে অতিবাহিত হইবার পর তাঁহার অন্যান্য ভাইগণ সম্মিলিতভাবে পরামর্শ করিয়া এইরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিল যে, তিনি যখন চাষ-আবাদ বা ঘর-সংসারের কোন কাজই করেন না, তাঁহাকে আর ফসলের কোন অংশ দেওয়া হইবে না। তবে তাঁহার ভাইদের মধ্যে অনেক বিবেচক ব্যক্তিও ছিলেন। তাঁহারা বলিলেন, শীস (আঃ)  যদিও আমাদের সাথে কাজে-কর্মে শরীক হন না, তাহাতে তাঁহাকে এভাবে ফসলের অংশ হইতে একেবারে বঞ্চিত করা কোনক্রমেই ঠিক হইবে না। কেননা তিনি যে সকল কাজে রত থাকেন, তাহাতে তাঁহার আমাদের এ সকল কাজে অংশ গ্রহণ করা মোটেই সম্ভব নহে। তিনি তো অলসতাবশতঃ আমাদের কাজ হইতে দূরে থাকেন না। অন্যান্য নেহায়েত জরুরী এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত থাকেন বলিয়াই সাংসারিক কাজে শরীক হইতে পারেন না; সুতরাং তাঁহাকে ফসলের এক  দশমাংশ দেওয়াই দরকার; নতুবা তাঁহার ভরণ-পোষণ চলিবে কি করিয়া?

হযরত শীস (আঃ) যখন নবুয়ত লাভ করেন, তাহার কিছুকাল পরে তাঁহার একটি পুত্র-সন্তান জন্মগ্রহণ করে। এই পুত্রের নাম ছিল নওশ। নওশ নাবালেগ থাকাকালেই হযরত শীস (আঃ) মৃত্যুবরণ করেন। নওশ অবশ্য নবী ছিলেন না। তবে নবী না হইলেও তিনি অত্যন্ত ধর্মভীরু ছিলেন। তিনি তাঁহার পিতার ধর্মে অবিচল থাকিয়া ঐ ধর্মই সকলের ভিতরে প্রচার করেন। 


নওশ মৃত্যুবরণ করিবার পর ‘কলবতান  নামক তাঁহার এক পুত্র পিতার প্রতিনিধি হিসাবে লোকদিগকে সৎকার্যের আদেশ এবং অসৎকার্য হইতে নিষেধ করিতে থাকেন । অবশ্য তিনি নিজেও যথেষ্ট ধার্মিক ব্যক্তি ছিলেন।



মূর্তিপূজার সূচনা 

মহান ব্যক্তি মেহলালের মৃত্যুর পরে একটি সুবর্ণ সুযোগ দেখিয়া পাপাত্মা ইবলীস বেশ গা ঝাড়া দিয়া উঠিল । সে ভাবিল, তাহার জন্য একটি সুন্দর  সুযোগ জুটিয়াছে। ইহা তাহাকে অবশ্যই কাজে লাগাইতে হইবে । এইরূপ ভাবিয়া লইয়া পাপিষ্ঠ ইবলীস একদা জনৈক সুফী-সাধকের বেশ ধরিয়া মেহলাইলের পুত্র ইজদের নিকট উপস্থিত হইয়া বলিল, দেখ ! দেশ-বিদেশ হইতে তোমার পিতার উদ্দেশ্যে আগত হাদিয়া উপঢৌকন এইভাবে ফেরত যাইতেছে। তোমরা একটা ব্যবস্থা অবলম্বন করিলেই তোঐসব নজর-নিয়াজগুলি রাখিয়া দিতে পার।


মেহলাইলের পুত্র বলিল, হে সাধু! কি এমন ব্যবস্থা করা যায় বলিয়া দিন না।


মালউন ইবলীস বলিল, তোমার মৃত পিতার একটি অবিকল মূর্তি তৈয়ার করে। তারপর উহা তোমাদের গৃহে স্থাপন করতঃ উহাকে খুবই ভক্তি-শ্রদ্ধা দেখাইতে থাক। আর লোকদের মধ্যে এইরূপ প্রচার করিয়া দাও যে, আমার পিতা মেহলাইল এলহাম যোগে আমাদিগকে নির্দেশ দিয়াছেন, তোমরা আমার একটি অবিকল প্রতিমূর্তি বানাইয়া উহার প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা প্রদর্শন কর। তাহাতেই আমি মনে করি যে, তোমরা এখনও আমার শিক্ষা, উপদেশ এবং শিখানো রীতি-নীতির উপর বহাল রহিয়াছ। তাহাতে আমি তোমাদের উপর অত্যন্ত খুশী থাকিব এবং ইহাতে আল্লাহ তায়ালা ও সন্তুষ্ট হইবেন।


এইরুপ প্রচারের ফলে লোকগণ একদিকে যেমন তোমাদের পিতা মেহলাইলের স্মৃতি অক্ষুন্ন থাকিবে, তাঁহার প্রভাব, প্রতিপত্তি এবং গুরুত্ব যেমন ছিল, এখনও তেমন থাকিবে । সঙ্গে সঙ্গে তোমাদের ও প্রভাব বহাল থাকবে এবং বৃদ্ধি পাইৰে। আর লোকগণ তোমার পিতার জীবিত থাকাকালে তাঁহাকে যেমন নজর-নিয়াজ প্রদান করিত, তাঁহার এই প্রতিমূর্তির উদ্দেশ্য ও সেই একইভাৰে উহা প্রদত্ত হইতে থাকিবে, ফলে এই প্রতিমূর্তির মাধ্যমেই তোমাদের আর্থিক অবস্থার বিরাট উন্নতি হইবে। অচিরেই তোমরা বিপুল ঐশ্বর্যশালী হইয়া পড়িবে ।


ইবলীসের এই কথায় মেহলাইলের পুত্র প্রলুব্ধ হইয়া পড়িল । সে মনে করিল, এইব্যক্তি তাঁহার অত্যন্ত হিতাকাঙ্ক্ষী। সে তাহাকে অতি উত্তম পরামর্শ দিতেছে। তখন সে বলিল, হে সাধু মহাজন ! আমি বা আমাদের কাহারও দ্বারা তো তেমন মূর্তি বানানো সম্ভব হইবে না, অনুগ্রহ করিয়া আপনি মূর্তিটি বানাইবার ব্যবস্থা করিয়া দিন। ইবলীস বলিল, সেজন্য তোমার কোন চিন্তা নাই । মূর্তি তোমাকে আমিই তৈরী করিয়া দিতে পারি। 

পাপিষ্ঠ ইবলীসের কথায় মেহলাইলের পুত্রগণ অত্যন্ত খুশী হইল।  ইবলীস শীঘ্রই মেহলাইলের একটা পাথরের মূর্তি তৈরী করিয়া আনিয়া তাহার পুত্রগণকে দিল । তাহারা যারপর নাই আনন্দিত চিত্তে উহা গ্রহণ করিয়া একখানা পৃথক গৃহে স্থাপন করতঃ উহার প্রতি অতিশয় ভক্তি ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করিতে লাগিল । ক্রমে তাহাদের দেখাদেখি ও তাহাদের দ্বারা উৎসাহিত হইয়া দেশ-বিদেশ হইতে আগত লোকগণও উক্ত মূর্তির চরণে নজর-নিয়াজ ও ভক্তি-অর্ঘ্য প্রদান করিয়া উহার চতুর্দিকে তাওয়াফ (প্রদক্ষিণ) করিতে লাগিল । ইবলীসও বসিয়া ছিল না। সে নানাভাবে সুযোগ মত ও বিভিন্ন কৌশলের আশ্রয়ে দেশ-বিদেশে মেহলাইলের মূর্তি পূজার উপকার ও সার্থকতার কথা প্রচার করিতে লাগিল । সে এইভাবে প্রচার করিতে লাগিল যে, যাহারা মূর্তি পূজা করিবে, মেহলাইল তাহাদের প্রতি খুশী হইয়া তাহাদের মুক্তি ও কল্যাণের জন্য আলাহর দরবারে সুপারিশ করিবেন । তাহাছাড়া মেহলাইলের দোয়ার ফলে তাহাদের ধন-সম্পদ ও জীবনযাত্রায় সচ্ছলতা অত্যন্ত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হইবে । উল্লিখিত কৌশলের মাধ্যমে ইবলীস দুনিয়াতে সর্বপ্রথম মূর্তি পূজার প্রচলন করিয়াছিল ।




Tags: Hazrat Shees (AS) history Bangla,

Hazrat Shees (AS) Bangla story,

Hazrat Shees (AS),

Hazrat Shees (AS),

Hazrat Shees (AS) story,