namaz porar niom bangla-রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নামায আদায়ের প্রণালী

রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নামায আদায়ের প্রণালী:

namaz porar niom bangla

নামাজ আদায়ের নিয়ম


namaz porar niom


রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নামায আদায়ের প্রণালী:

হাদীসসমূহে বর্ণিত আছে যে, হুযুরে পাক (সাঃ) যখন নামাযে দাঁড়াইতেন, তখন তাকবীরে তাহরীমা বলিয়া উভয় হাত কান বরাবর উঠাইয়া ডান হাতকে বাম হাতের কার উপরে রাখিয়া তাহরীমা বলিতেন। তাহারপর ছানা পাঠ করিতেন । অতঃপর প্রথমে তায়ায়্যুয, পরে তাসমিয়া পড়িতেন। তাহার পর সূরা ফাতিহা পাঠ করিয়া শেষে আমীন পড়িতেন। 

হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) বলেন, ইমাম চারিটি বিষয় নিঃশব্দে পড়িবে। যথা: তায়ায়্যুয, তাসমিয়া, ছানা এবং আমীন । তৎপর হুযুরে পাক (সাঃ)। কোরআনে পাকের কোন একটি সুরা পাঠ করিতেন। তৎপর তাকবীর বলিয়া রুকুতে যাইতেন । রুকু হইতে উঠিয়া সোজাভাবে দাঁড়াইবার সময় -সামি আল্লাহু লিমান হামিদাহ বলিতেন।

 রুকুতে থাকা অবস্থায় উভয় হাতের তালুতে দুই হাঁটু উত্তমরূপে চাপিয়া ধরিতেন এবং অঙ্গুলিসমূহ ফাঁক করিয়া রাখিতেন। হুযুরে পাক (সাঃ) যখন রুকুতে যাইতেন, তখন তাহার বাহুদ্বয়কে পার্শ্ব হইতে দূরে রাখিতেন এবং পিঠকে সোজাভাবে  রাখিতেন আর মাথাটিকে পিঠের বরাবর রাখিতেন। রুকুতে গিয়া হুযুরে পাক (সাঃ) তিনবার সুবহানা রাব্বিয়াল আজীম পাঠ করিতেন। কখনও কখন ও ইহার বেশীবারও পড়িতেন । 

তিনি রুকু হইতে সোজা হইয়া না দাঁড়াইয়া কখন ও সিজদায় যাইতেন না। সিজদায় যাইবার সময় তিনি প্রথম হাঁটুদ্বয় মাটিতে রাখিতেন তাহারপর হাতদ্বয় রাখিতেন। তাহারপর নাসিকা, তাহারপর কপাল মাটিতে রাখিতেন। সিজদায় গিয়া তিনি বাহুদ্বয়কে ও পেটটিকে উরু হইতে এতটুকু দুরে রাখিতেন যাহাতে অনায়াসে একটি বকরীর বাচ্চা উহার ফাঁক দিয়া যাতায়াত করিতে পারিত। সিজদাহর সময় তিনি মাথাটিকে উভয় হাতের মধ্যবর্তী স্থানে রাখিতেন এবং পায়ের অঙ্গুলিসমূহ কেবলা রোখ থাকিত।
 

হযুরে পাক (সাঃ) সিজদায় গিয়া অন্ততঃ তিনবার সিজদাহর তাসবীহ সুবহানা রাব্বিয়াল আলা পাঠ করিতেন । অতঃপর সিজদাহ হইতে সম্পূর্ণ সোজা হইয়া বসিবার পর দ্বিতীয় সিজদায় যাইতেন। যে নামাযে  কিরাত দীর্ঘ হইত, সেই নামাযে রুকু সিজদাহও লম্বা হইত। আর যে নামাযে কিরাত ছোট হইত, রুকু-সিজদাহ ছোট হইত। মুসলিম শরীফে উক্ত হইয়াছে যে, হুযুরে পাক (সাঃ) প্রত্যেক দুই রাকাত পরে তাশাহহুদ পাঠ করিতেন।

হুযুরে পাক (সাঃ) যখন সিজদাহ হইতে উঠিয়া দাঁড়াইতেন, তখন উরু ও হাঁটুর উপর ভর দিয়া দাঁড়াইবার সময় মাটিতে হাত দ্বারা ভর দিয়া দাঁড়াইতে নিষেধ করিয়াছেন। হুযুরে পাক (সাঃ) তাশাহহুদে বসিবারকালে বাম পা বিছাইয়া তাহার উপর বসিয়া ডান পা খাড়া করিয়া রাখিতেন। নামাযের শেষ রাকাতের পরবর্তী বৈঠকের ন্যায় বসিতেন । তাশাহহুদ পড়িবার সময় হস্তদ্বয় উভয় উরুর উপর রাখিতেন এবং তাশাহহুদে হুযুর (সাঃ) ডান হাতের তর্জনী অঙ্গুলির দ্বারা ইঙ্গিত করিতেন ।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) ও হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন যে, হুযুরে পাক (সাঃ) আমাদিগকে যে তাশাহহুদ শিক্ষাদান করেছেন, তা ছিল এই প্রকার:

আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি আচ্ছালাওয়াতু অত্তাইয়্যিবাতু আচ্ছালামু আলাইকা আইয়্যুহান্নাবিয়্যু অরাহমতাতুল্লাহি অবারাকাতুহু, আচ্ছালামু আলাইনা, অ  আলা ইবাদিল্লাহিছ ছোয়ালিহীনা, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আ আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু। | 

হযরত আবদুর রহমান ইবনে আবু লায়লা (রাঃ) কাব ইবনে আজরা হইতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হুযুরে পাক (সাঃ) হইতে শুনিয়াছি, এমন একটি উপঢৌকন আমি তোমার  সম্মুখে বর্ণনা করিব কি? তাহার উত্তরে আমি বলিলাম, অবশ্যই বর্ণনা করিবেন।

অতঃপর তিনি বর্ণনা করিলেন, আমি হুযুরে পাক (সাঃ)-এর নিকট আরজ করিলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাঃ)! আল্লাহর প্রতি সালাম প্রেরণ করিবার নিয়মটি আপনি আমাদিগকে শিক্ষা দিয়াছেন, কিন্তু এখন আপনার প্রতি প্রেরণের নিয়মটি শিক্ষা দিন। হুযুরে পাক (সাঃ) বলিলেন, তোমারা আমার প্রতি এইরূপে দরূদ প্রেরণ করিবে:

 আল্লাহুমা ছাল্লি আলা মুহাম্মাদিউ অ আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা ছাল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ও আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিউ অ আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইব্রাহীমা অ আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।

হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন যে, হুযুরে পাক (সাঃ) এত বেশী পরিমাণে দীর্ঘ সময় নফল নামায পড়িতেন যে, তাঁহার পদদ্বয় ফুলিয়া যাইত। | হযরত রাসূলে করীম (সাঃ) এক হাদীসে এরশাদ করেন যে, নামাযের মধ্যেই আমার চক্ষুর শীতলতা।

হযরত ইবনে মালিক (রাঃ) বলেন যে এক রাত্রিতে আমি হযুরে পাক (সাঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি নিদ্রা হইতে জাগ্রত হইয়া প্রথমে মেসওয়াক ও পরে অজু করিয়া নামাযে দাঁড়াইলেন। অতঃপর আমি ও তাহার সহিত নামাযে দাড়াইয়া গেলাম । হুযুরে পাক (সাঃ) সূরা বাকারা পাঠ আরম্ভ করিলেন। যখন কোন রহমতের আয়াত আসিল, তিনি (তেলাওয়াত) বিরতি দিন তালাহর দরবারে রহমতের আবেদন পেশ করিলেন। অতঃপর যা হন।

হযরত ইবনে মালিক (রাঃ) বলেন যে এক রাত্রিতে আমি হুযুরে পাক (সাঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি ন্দ্রিা হইতে জাগ্রত হইয়া প্রথমে মেসওয়াক ও পরে অজু করিয়া নামাযে দাড়াইলেন। অতঃপর আমি ও তাহার সহিত নামাযে দাঁড়াইয়া গেলাম । হুযুরে পাক (সাঃ) সূরা বাকারা পাঠ আরম্ভ করিলেন। যখন কোন রহমতের আয়াত আসিল, তিনি (তেলাওয়াত) বিরতি দিয়া আল্লাহর দরবারে রহমতের আবেদন পেশ করিলেন। অতঃপর যখন কোন আযাবের আয়াত আসিল, তিনি বিরতি দিয়া আল্লাহর দরবারে  আযাব হইতে রেহাইর দরখাস্ত পেশ করিলেন ।
 

তাহারপর যতক্ষণ তিনি কিয়ামে ছিলেন ততক্ষণ রুকুতে  কাটাইলেন। আর বলিলেন, সুবহানা যিল জাবারুতি অল মালাকুতি অল কিবরিয়ায়ি। রুকু হইতে মস্তক উত্তোলন করিয়া রুকুর সমপরিমাণ সময়ই দাঁড়াইয়া থাকিলেন। এসময় রুকুর মধ্যকার বাক্যই পাঠ করিলেন  ।

তারপর সিজদাহর মধ্যে ঐ একই বাক্য পাঠ করিলেন  । তাহার পর উভয় সিজদাহর মাঝখানে বসিলেন।  ঐ সময়ও বাক্য  ঐ বাক্যই পড়িলেন । তৎপর বাকি রাকাতসমূহ আল-ইমরান, সূরা নিসা এবং সূরা মায়েদা তেলাওয়াত করিলেন ।

হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, এক রজনীতে হুযুরে পাক (সাঃ) তাহাজ্জুদ নামাযের মধ্যে একটি আয়াত পুনঃ পুনঃ তেলাওয়াত করিতে থাকেন। উক্ত আয়াতটি ছিল - ‘ইন তুআযযিবহুম ইবাদুকা ওয়া ইন তাগফির লাহুম ফাইন্নাকা আনতাল আযীযুল হাকীমা। অর্থাৎ যদি আপনি তাহাদিগকে শাস্তিদান করেন তথাপি নিঃসন্দেহে তাহারা আপনার গোলাম । আর যদি আপনি তাহাদিগকে মাফ করিয়া দেন তথাপি আপনিই পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।